জীবন যাপনে ওহীর গুরুত্ব
প্রতিক্ষন ডেস্ক
ম্যাসেজ বা বার্তা-এর সঙ্গে আমরা কম-বেশি পরিচিত। যারা মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের সবাই ম্যাসেজ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। এমনকি যারা পড়া লেখা জানে না কিন্তু মোবাইল ব্যবহার করেন, মোবাইলে ম্যাসেজের শব্দ হলেই বলেন, ম্যাসেজ আসছে। কিছু দিন হলো এ ম্যাসেজের আবিষ্কার। প্রকৃত পক্ষে এ ম্যাসেজের ব্যবহার অতি প্রাচীন। পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে দেড় হাজার বছর পূর্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সব নবি-রাসুলগণই এ ম্যাসেজের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা, প্রত্যাদেশ লাভ করেছেন। যার আরবি নাম ওহি। বর্তমান সভ্যতা এর নাম দিয়েছেন ম্যাসেজ। এ ম্যাসেজ বা ওহি আল্লাহর এক নিদর্শন।
আল্লামা তকি ওসমানি বলেন, ‘ওহি মানুষের জন্য জ্ঞান আহরণের সেই সর্বোচ্চ মাধ্যম, যা দ্বারা মানুষ এমন জিনিসের জ্ঞান লাভ করতে পারে, যা কোনো ইন্দ্রিয় ও বিবেক বুদ্ধির দ্বারা অর্জন করা সম্ভব নয়। যে মাধ্যম একমাত্র নবি-রাসুলগণই লাভ করে থাকেন। আর মুসলিম উম্মাহ নবি-রাসুলেগণের মাধ্যমে ওহির জ্ঞান অর্জন করে থাকে।’ সুতরা ওহি হচ্ছে- আল্লাহ ও তার বান্দাদের মধ্যে জ্ঞান বিষয়ক একটি পবিত্র শিক্ষার মাধ্যম।
ওহির গুরুত্ব
ওহির জ্ঞানের মাধ্যমেই মানুষ জীবনযাত্রায় সঠিক জ্ঞান লাভ করে। শরিয়তের দৃষ্টিতে যে কথাগুলো ওহি হিসেবে সাব্যস্ত, তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ। ওহির ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ পোষণ করা বা অবিশ্বাস করা কুফরি। এ কারণেই পবিত্র কুরআনে শুরুতেই এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে- ‘আলিফ, লাম, মিম। এটি সেই কিতাব। যেখানে কোনো সন্দেহ নেই। এটি মুত্তাকি তথা আল্লাহভিরু লোকদের জন্য পথপ্রদর্শক। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১-২)
আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘হে মানুষ তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে রাসুল সত্যসহ (ওহি) আগমন করেছেন। সুতরাং তোমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন কর এবং ঈমান আন, এটা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। (সুরা নিসা : আয়াত ১৭০)
ওহির প্রয়োজনীয়তা কি?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে কেন কি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বান্দার কোন কোন কাজ পছন্দ করে আর কোনটি পছন্দ করেন না। মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সফলভাবে পরিচালনার জন্য এ সব প্রশ্নের উত্তর জানা এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ওহি হলো জ্ঞান অর্জনের সেই সর্বোত্তম মাধ্যম, যা মানুষের এ অনিবার্য প্রয়োজনকে পূরণ করে। এ দৃষ্টিকোন থেকে ওহির প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক।
ওহি প্রেরণের উদ্দেশ্য
ওহি প্রেরণে আল্লাহ উদ্দেশ্যও হচ্ছে, মানুষকে তার রূহের জগতের স্বীকারোক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আনুগত্যের জন্য সুসংবাদ প্রদান এবং অবাধ্যতার কারণে সাবধানবাণী শুনিয়ে অজুহাত উত্থাপনের পথ বন্ধ করে দেয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আমি সুসংবাদবাহী ও সাবধানকারী রাসুলগণকে প্রেরণ করেছি যেন রাসুল আসার পর আল্লাহর কাছে মানুষের কোনো অভিযোগ করার কিছু না থাকে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৬৫) এ জন্যই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল সত্যদ্বীনসহ (ওহি) প্রেরণ করেছেন।
ওহি অস্বীকারকারীর পরিনাম
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাবাসীর নিকট যখন ওহির পয়গাম পেশ করলেন, তারাও ওহিকে অস্বীকার করেছিল। তাদের অস্বীকারের ভয়াবহ পরিনামের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী আমি আপনার নিকট ওহি প্রেরণ করেছি, যেরূপ ওহি প্রেরণ করেছিলাম নুহ ও তার পূর্ববর্তীদের ওপর। (সুরা নিসা : আয়াত ১৬৩)
তাফসিরকারগণ বলেন, এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওহিকে নুহ আলাইহিস সালামের ওহির সঙ্গে তুলনা করার মর্ম হচ্ছে- ওহি অস্বীকার মানবজাতির জন্য প্রচণ্ড গজবের কারণ হয়ে থাকে। হজরত নুহ আলাইহিস সালামের উম্মতগণ ওহিকে অস্বীকার করেছিল বিধায় তাদের ওপর মহাপ্লাবনের মতো বড় গজব আরোপিত হয়েছিল। সুতরাং বুঝা গেল যে, নবি-রাসুলকে বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ওহিকেও বিশ্বাস করতে হবে।
বর্তমান দুনিয়ায় মানুষের জ্ঞানে যদি মোবাইল-ইন্টারনেটে ম্যাসেজ আদান-প্রদান সম্ভব হয় তবে, মহাশক্তির অধিকারী মহান আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলগণের মাঝে ওহি পাঠাতেন, এটা তার নিকট কোনো অসম্ভব বিষয়ই নয়। বরং ওহি মহান আল্লাহর এক আশ্চর্য নিদর্শন ও কুদরাত। যার ঈমান আনা আবশ্যক।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে ওহির জ্ঞানের মতো সর্বোক্তম জ্ঞান দান করুন। ওহির জ্ঞান অনুযায়ী আমল করার এবং ওহির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
প্রতিক্ষন.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
প্রতিক্ষন/এডি/বিএ